This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Sunday, April 28, 2013

প্রাত্যহিক খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ঝুঁকি ও রাজনীতি


১.৬ গবেষণার সীমাবদ্ধতা
আমি আমার গবেষণা কাজটিকে যথেষ্ঠ তথ্যবহুল করার চেষ্টা করেছি।  তারপরও কিছু সীমাবদ্ধতা থেকেই যায়।  আমার গবেষণার যে সকল সীমাবদ্ধতা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল আমি একজন ছাত্র, এছাড়াও রয়েছে সময় স্বল্পতা তথ্য দাতাদের কাছ থেকে তথ্যের অপর্যপ্ততা।  এছাড়া আরও বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে ফান্ড-স্বল্পতা।  ব্যক্তি পর্যায়ে থেকে না হয়ে যদি কোন প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে এই গবেষণা করা হয় তাহলে গবেষণা আরও যুক্তিযুক্ত হবে বলে আমি মনে করি।
১.৭ অধ্যায় পরিকল্পনা
গবেষণা প্রতিবেদনটিকে লেখার ক্ষেত্রে আমি আমার পুরো কাজটিকে মোট ছয়টি অধ্যায়ে ভাগ করেছি ছয়টি অধ্যায়ে নিন্মোক্তভাবে আমি আমার আমার কাজটিকে সাজিয়েছি ।
প্রথম আধ্যায় আমি গবেষণাটির একটি পরিচিতি তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি।  এতে অন্তভর্ূক্ত হয়েছে গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।  এছাড়া গবেষণার কেন্দ্রীয় জিজ্ঞাসাগুলো যার ভিত্তিতে আমি গবেষণা কার্য পরিচালনা করবো এবং আমার গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করব তার উল্লেখ রয়েছে এই অধ্যায়ে।  এছাড়া গবেষণার যৌক্তিকতা শিরোনামে অন্তভর্ূক্ত হয়েছে আমার এই গবেষণাটি কেন গুরুত্বপূর্ণ নৃবিজ্ঞান জ্ঞানকান্ডে কেন এই বিষয়ের উপর গবেষণা প্রাষঙ্গিক কোন কোন পরিসরে গবেষণাটি অবদান রাখতে সক্ষম সে সম্পর্কিত আলোচনা।  এছাড়া এ গবেষণার ক্ষেত্রে যে সকল সীমাবদ্ধতা রয়েছে সে বিষয়গুলোরও উল্লেখ রয়েছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে গবেষণাটিতে আমি যে সমস্ত পদ্ধতি অবলম্বন করেছি তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী তুলে ধরা হয়েছে । 
তৃতীয় অধ্যায়টিতে আমি গবেষণা শুরু করবার কালে যে সমস্ত বই পুস্তকের সাহায্য নিয়েছি সেগুলো পাঠের প্রেক্ষিতে একটি পর্যালোচনা তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি।
চতুর্থ অধ্যায়টিতে আমি খাদ্য ও খাদ্য সম্পর্কিত বিশ্বাস,কেমিক্যালযুক্ত খাবার বলতে আমরা কি বুঝি সেটা ,কেমিক্যালযুক্ত খাদ্য গ্রহনের ফলে আমাদের কি কি স্বাস্হ্য ঝুঁকি ঘটতে পারে সেটা, আর দেখানো হয়েছে খাদ্য নিয়ে রাষ্ট্রের ভাবনাকে।
পঞ্চম অধ্যায়টিতে আমি খাদ্যে রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর পেছনে যে সকল বৈশ্বিক ও স্হানিক রাজনীতি কাজ করে সে বিষয়টা স্পষ্ট করেছি। 
ষষ্ঠ অধ্যায়ে আমার এই গবেষণা প্রতিবেদনটির উপসংহার টানা হয়েছে।  শেষ এই অধ্যায়টিতে আমি মূলত পুরো গবেষণা কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে খাদ্য সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস,কেমিক্যালযুক্ত খাবার,কেমিক্যালযুক্ত খাবার গ্রহনের ফলে স্বাস্হ্য ঝুঁকি, খাদ্যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের পেছনের রাজনীতি এগুলো সমপর্কিত একটি পর্যালোচনা দাঁড় করিয়েছি।

১.৮ উপসংহার
খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত মানুষের ধারণায়ন যেমন অপরিবর্তিত কোন বিষয় নয় তেমনি খাদ্যাভ্যাস ও স্হির কোন বিষয় নয়।  এগুলো মানবজীবনের, মানুষের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  খাদ্যের সাথে উৎপাদনব্যবস্হা জড়িত যার পরিবর্তনের সাথে সাথে ঐতিহাসিকভাবে সামাজিক বিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।  পরিবর্তিত উৎপাদন ব্যবস্হায় পুঁজিবাদের প্রবেশের ফলস্বরূপ বাজারের আধিপত্যশীল কাঠামো দেখতে পাওয়া যায়।  উৎপাদনব্যবস্হার পরিবর্তন এবং বাজারের আধিপত্যশীল ভূমিকার প্রাক্কালে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা তার নৃবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান নৃবিজ্ঞানের জ্ঞানতাত্ত্বিক পরিসরে আরেকটি মাত্রা যুক্ত করবে বলে আমি ধারণা করছি।  খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে বাজারের ভূমিকা এবং রাষ্ট্রীয় শাসনযন্ত্রের অবস্হানের পাঠ ও নৃবিজ্ঞানে প্রাসঙ্গিক।

প্রাত্যহিক খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ঝুঁকি ও রাজনীতি


১.২ গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
যে কোন গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারন একটি অন্যতম কেন্দ্রীয় বিষয়।  চতুর্থ বর্ষের চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান শিরোনমের ৪০৫ নং ও ২য় বর্ষের রাজনৈতিক নৃবিজ্ঞান শিরোনামের ২০৪ নং কোর্সের পড়াশোনা আমার গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিধর্ারনে আমাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে।  চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানের আগ্রহের অন্যতম জায়গাগুলো হলো মানুষের শরীর, পুষ্টি, বিশ্বাস ব্যবস্হা প্রভৃতি বিষয়।  আমি আমার গবেষণাটিতে এই প্রত্যয় গুলোর পাশাপাশি এর সাথে রাজনীতি কিভাবে যুক্ত তার প্রতিফলন ঘটাতে চাইবো।  আমার গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলোকে আমি নিন্মোক্তভাবে সাজাতে চাই-
(১) আমার গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো খাদ্য দ্রব্যে রাসায়নিক পদার্থের  ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর পর্যায় গুলোকে বুঝা।  অর্থাৎ কোন কোন পর্যায় থেকে খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।  যেমন বলা যেতে পারে উৎপাদন পর্যায় থেকে না সরবরাহ পর্যায় থেকে।
(২) সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ব্যবস্হাকে ফুটিয়ে তোলা।  এমন অনেক মানুষ আছে যারা দৈনন্দিন খাদ্যদ্রব্য নির্ধারন করে পুষ্টিগুণের কথা বিবেচনায় না রেখে।  আবার এমন অনেক শিক্ষিত মানুষ আছে যারা পুষ্টিগুণের কথা মাথায় রেখে খাদ্যদ্রব্য নির্ধারণ করে কিন্তু রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের কারণে খাদ্যদ্রব্যের সেই পুষ্টিগুণ আর থাকে না।
(৩) খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের পেছনে কোন ধরনের রাজনীতি কাজ করে কিনা সেই বিষয়টাকে ফুটিয়ে তোলাও আমার গবেষণার উদ্দেশ্য।
(৪) রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য গ্রহনের ফলে শরীরে কোন কোন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সেটা দেখা।
(৫) খাবারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার নিয়ে গবেষকের ভাবনার একটি রুপ প্রকাশ করা ও আমার গবেষণার আর একটি উদ্দেশ্য।
সার্বিকভাবে আমার লক্ষ্য থাকবে আমার এই সমস্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণা কৌশল ব্যবহার করা।
১.৩ গবেষণার বিষয়বস্তু:
প্রাত্যহিক খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ঝুঁকি ও রাজনীতি ।
১.৪ গবেষণার এলাকা
আমি আমার গবেষণার মাঠ হিসেবে ঢাকা জেলাকে বেছে নেই।  সমাজ বিজ্ঞানের অন্যান্য জ্ঞানকান্ডের (যেমনঃ অর্থনীতি, ভূগোল) একটি স্বতন্ত্রতার জায়গা হলো গবেষণার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পার্থক্য।  সমাজ বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা যেখানে দখরঃঃষব ধনড়ঁঃ ধ ষড়ঃদপদ্ধতি ব্যবহার করে সেখানে নৃবিজ্ঞান দখড়ঃ ধনড়ঁঃ ধ ষরঃঃষবদ পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে।  তাই আমিও আমার গবেষণার মাঠ হিসেবে ঢাকা জেলার সাভার থানার অন্তর্গত সাভার বাজারটিকে বেছে নিয়েছি।  গবেষণা কাজটিকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য আমি ধামরাই থানার অন্তর্গত দেপাসাই ও গোলাইল গ্রাম, ইসলামপুর আড়ত, বাইপাইল আড়ত এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের খাদ্য ও পুষ্টি ইনষ্টিটিউট এ  কাজ করি।
১.৫ গবেষণার যৌক্তিকতা
খাদ্য মানবজীবনের একটি অপরিহার্য বস্তু।  মানুষের সংস্কৃতিরও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  গরহুঃ (১৯৯৭) এর ভাষায় মানুষ যেভাবে তার সাংস্কৃতিক বস্তুসমূহের সাথে নিজেদের সংযুক্ত করে তেমনি আধুনিক সমাজে খাদ্যের পরিবর্তনশীল চরিত্র যাকে উৎপাদন ও ভোগ এবং ব্যবহার ও ফাংশন এর দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পাঠ করা যেতে পারে।   সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী উধারফ অৎহড়ষফ (১৯৯৯) খাদ্য নিয়ে চীনে দীর্ঘকাল কাজ করেছেন।  তিনি বলেন, ্তুঋড়ড়ফ রং ধহফ পড়হঃরহঁবং ঃড় নব ঢ়ড়বিৎ রহ ধ সড়ংঃ নধংরপ, ঃধহমরনষব ধহফ রহবংপধঢ়ধনষব ভড়ৎস্হ. আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যকে ঘিরে যে চক্র২সেদিকে তাকালে এই বক্তব্যকে অস্বীকার করা যায়না।  খাদ্য শুধুমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিষয় নয়।  এটি তার পরিবার, সমাজ, গোষ্ঠী পরিচিতি, সংস্কৃতি, ধর্ম এমনকি রাষ্ট্রীয় পরিসরের সাথে যুক্ত একটি বিষয়।  ‘পরিবারের সকলের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য কেনার সামর্থ্যের বিষয়টি যেমন জড়িত তেমনি রোজগার ও খাদ্য কেনার কাজটি কার হাতে কিভাবে রয়েছে এবং রন্ধন ও পরিবেশনের কাজটি কার হাতে রয়েছে এর ভেতর দিয়ে লিঙ্গীয় সম্পর্ককে অনুধাবন করা সম্ভব’৩(নৃবিজ্ঞান পত্রিকা ২০০৬পৃষ্ঠা ৩৯-৪০সংখ্যা ১১) ।  খাদ্যের সাথে বাজার অর্থনীতি জড়িত।  পুঁজিবাদী সমাজে খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে একচেটিয়া ভূমিকা রাখছে বাজার।  স্হানীয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার খাদ্যের নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ, মান, দাম প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ এবং একইসাথে সামর্থ্যকেও প্রভাবিত করছে।    

এখানে সরকারের বাজারব্যবস্হা নিয়ন্ত্রণও নজরদারির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।  খাদ্যের বাজারজাতকরণে সরকারি বিধি ও নিয়ন্ত্রণ এবং খাদ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রনে সরকার পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞান এবং ‘বেশী বেশী এসব খাবার গ্রহনের ফলে মানবদেহে কি কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে সম্পর্কিত গবেষকের ভাবনা তুলে ধরতে আমি আগ্রহী।  খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনও পর্যন্ত আমার জানামতে হয়নি।  বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রভাবে জনমনে যে উদ্বেগের চিত্র দেখা যাচ্ছে এই পরিস্হিতিতে এ বিষয়ে নৃবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে আমি যুক্তিযুক্ত মনে করছি। 

২চক্র- আমাদের খাদ্যগ্রহণ প্রণালী প্রতিদিন কয়েকটি বেলায় বিভক্ত।  যেমন: সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবার মূল কোর্স হিসেবে চক্রাকারে বছরজুড়ে চলতে থাকে শুধুমাত্র কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া।  যেমন: রোজা ও উপবাস।


প্রাত্যহিক খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ঝুঁকি ও রাজনীতি


১.১ ভূমিকা
সুন্দর ,স্বাসথ্যকর ও শান্তিময় জীবনযাপনে শরীর সুরক্ষার বিকল্প নেই।  নিয়মিত বিশুদ্ধ খাবার গ্রহন এবং অস্বাস্হ্যকর খাদ্য বর্জনই আমাদের সুস্হ জীবনযাপনের একমাত্র উপায়।  আমরা সবাই বাঁচতে ভালবাসি।  তাই বেঁচে থাকার জন্যই এত ঝক্কি ঝামেলা।  মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না বাঁচার জন্য খায় (দৈনিক আমার দেশ-৮ ফেব্রুয়ারি,২০১৩ )।  তা না হলে ডাক্তাররা রোগীদের যখন কিছু কিছু খাদ্য বস্তু সাময়িক খেতে বারণ করেন তখন রোগী ডাক্তারদের উপদেশ লঙঘন করত।  তাই স্বাস্হ্যের বিধিসম্মত সতর্কীকরণ, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করে জীবনকে সুস্হ, রোগমুক্ত করে রাখতে কে না চায়।  কিন্তু বর্তমান সময়ে খাবার নিয়ে মানুষের মনে নানা রকম প্রশ্নের উদয় হচ্ছে(যেমন- সে যে খাবারটা খাচ্ছে/কিনছে সেটা কি ভাল, তাতে কি কোন কেমিক্যাল আছে ইত্যাদি)।  আজকাল আমরা যেসব খাবার খাচ্ছি তার অধিকাংশই ভেজাল।  নিত্যদিনের চাল, ডাল, তেল, লবণসহ ঠান্ডা পানীয়দ্রব্য, ফলমূল এবং মিষ্টান্ন দ্রব্যে ভেজালের ছড়াছড়ি।  যেমন- কোকাকোলা, মিরান্ডা, পেপসি ইত্যাদিতে ক্ষতিকারক রঙ এবং রাসায়নিক তরল পদার্থ ব্যবহার করে বাজারজাত করা হচ্ছে।  মিষ্টান্নদ্রব্য যেমন- জিলাপি, বুন্দিয়া, রসগুল্লা প্রভৃতি বানানোর জন্য ময়দা,আটা,সুজি ইত্যাদি ভালভাবে মেখে দু-তিনদিন নিরাপদে পচানো হয় এবং তারপর নানা ধরনের পাউডার, রং মিশিয়ে হোটেল রেষ্টুরেন্টে সাজিয়ে রাখা হয়।  মরিচগুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো ঝকঝকে রঙিন করার জন্য ইটের গুঁড়োও মেশানো হয় বলে প্রায়ই শোনা যায়।  বিভিন্ন ধরনের ফলমূল যেমন- আম, কলা, পেঁপে, নাশপাতি এবং টমেটো, পটল, আলু ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদি তাজা রাখতেও কৃত্রিম উপায়ে পকাতে ইথোপেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইট নামক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে।  বিদেশ থেকে যেসব মাছ আমাদের দেশে আমদানি হচ্ছে সেগুলোতেও নাকি ফরমালডিহাইড নামক এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ ব্যবহার করা হচ্ছে।  খাবারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার শুরুর ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়।  এক যুগ আগেও খাবারে এত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হতো না যেমনটা বর্তমানে করা হয়। 

খাদ্যের উৎপাদন, বন্টন, ভোগ প্রভৃতি ব্যবস্হার সাথে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো জড়িত।  উৎপাদন, বন্টন ও ভোগকে ঘিরে যেমন সামাজিক সম্পর্ক ক্রিয়াশীল, তেমনি অর্থনৈতিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের শাসননীতি ও ক্রিয়াশীল।  গধৎী(১৯৭৬) সমাজ ব্যবস্হার ঐতিহাসিক বির্বতনকে
 দেখান যেখানে পরিবর্তিত সমাজব্যবস্হার সাথে উৎপাদন ব্যবস্হার পরিবর্তনকে দেখানো হয়েছে।  মার্ক্সের মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে বিদ্যমান অর্থনৈতিক শ্রেণীশোষনের মূলকে স্পষ্ট করার মধ্য দিয়ে শ্রেণীসংগ্রামের ঐতিহাসিকতাকে দেখানো এবং এর শেষ পরিণতি হিসেবে সমাজতন্ত্রকে উপস্থাপন করা।  তিনি আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে শুরু করে ধনতান্ত্রিক সমাজের প্রতিটি স্তরে শোষক এবং শোষিত শ্রেণীর সংগ্রামকে চিহ্নিত করেছেন।  উৎপাদন শক্তির বিকাশের মধ্যে দিয়ে এক সমাজ থেকে অন্য সমাজ ব্যবস্হায় রুপাান্তরের প্রক্রিয়ায় শ্রেণীশোষন কিভাবে বিদ্যামান থাকে তা তিনি দেখিয়েছেন।  বর্তমান সমাজ হলো পুঁজিবাদী সমাজ।  পুঁজিবাদী সমাজে উৎপাদনের একক হলো পণ্য।  পণ্য মানুষের শ্রমের ফসল যা বিনিময়ের জন্য তৈরি হয়।  পণ্যের বিনিময়মূল্য ও চাহিদা সৃষ্টির পরই আসে বাজারসর্ম্পক।  পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্হায় পন্য ভোগের জন্য মানুষ বাজারের ওপর নির্ভরশীল।  বাজারে পণ্যের যোগানের উপর ভোগের ধরন ও নির্ভরশীল।

খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের পেছনে নানান ধরনের রাজনীতি কাজ করে।  দেখা যায় যে, কৃষক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতেই খাবারে নানান ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।  কিছু মুষ্টিমেয় পণ্যব্যসায়ী সাধারণ ভোক্তার কথা চিন্তা না করে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থের কথা চিন্তা করে এ কাজ করছে।  এর ফলে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।  মানুষের স্বাস্হ্য ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।  খাবারের পুষ্টিগুন নষ্ঠ হচ্ছে।  এ নিয়ে গবেষকরা ও তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।  মিডিয়া এ বিষয়ে খুবই ভয়ংকর তথ্য দিচ্ছে।

আমার গবেষনার বিষয় হচ্ছে দৈনন্দিন খাবারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার।  খাদ্যকে ঘিরে মানুষের যে চিন্তা ধারণা ও বিশ্বাস রয়েছে সেটাকে দেখা।  একই সথে সমগ্র প্রক্রিয়াটির রাজনৈতিক অর্থনীতিকে বুঝতে চেষ্টা করা।  এক্ষেত্রে বর্তমানে বাজারে যেসব খাদ্যপন্য পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর গুণগত মান সম্পর্কে নানা রকম মতামত পাওয়া যায়।  ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারে এখন হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে।  বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেজাল খাদ্য বাজারজাত করা প্রতিরোধ করার চেষ্টা দেখা যায়।  এই প্রতিরোধের স্হায়িত্ব কতটুকু তা ভাবনার বিষয়। এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে খাবারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার নিয়ে একটা নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রয়োজন তা আমি করার চেষ্টা করেছি।