Sunday, April 28, 2013

প্রাত্যহিক খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ঝুঁকি ও রাজনীতি


১.২ গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
যে কোন গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারন একটি অন্যতম কেন্দ্রীয় বিষয়।  চতুর্থ বর্ষের চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান শিরোনমের ৪০৫ নং ও ২য় বর্ষের রাজনৈতিক নৃবিজ্ঞান শিরোনামের ২০৪ নং কোর্সের পড়াশোনা আমার গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিধর্ারনে আমাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে।  চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানের আগ্রহের অন্যতম জায়গাগুলো হলো মানুষের শরীর, পুষ্টি, বিশ্বাস ব্যবস্হা প্রভৃতি বিষয়।  আমি আমার গবেষণাটিতে এই প্রত্যয় গুলোর পাশাপাশি এর সাথে রাজনীতি কিভাবে যুক্ত তার প্রতিফলন ঘটাতে চাইবো।  আমার গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলোকে আমি নিন্মোক্তভাবে সাজাতে চাই-
(১) আমার গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো খাদ্য দ্রব্যে রাসায়নিক পদার্থের  ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর পর্যায় গুলোকে বুঝা।  অর্থাৎ কোন কোন পর্যায় থেকে খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।  যেমন বলা যেতে পারে উৎপাদন পর্যায় থেকে না সরবরাহ পর্যায় থেকে।
(২) সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ব্যবস্হাকে ফুটিয়ে তোলা।  এমন অনেক মানুষ আছে যারা দৈনন্দিন খাদ্যদ্রব্য নির্ধারন করে পুষ্টিগুণের কথা বিবেচনায় না রেখে।  আবার এমন অনেক শিক্ষিত মানুষ আছে যারা পুষ্টিগুণের কথা মাথায় রেখে খাদ্যদ্রব্য নির্ধারণ করে কিন্তু রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের কারণে খাদ্যদ্রব্যের সেই পুষ্টিগুণ আর থাকে না।
(৩) খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের পেছনে কোন ধরনের রাজনীতি কাজ করে কিনা সেই বিষয়টাকে ফুটিয়ে তোলাও আমার গবেষণার উদ্দেশ্য।
(৪) রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য গ্রহনের ফলে শরীরে কোন কোন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সেটা দেখা।
(৫) খাবারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার নিয়ে গবেষকের ভাবনার একটি রুপ প্রকাশ করা ও আমার গবেষণার আর একটি উদ্দেশ্য।
সার্বিকভাবে আমার লক্ষ্য থাকবে আমার এই সমস্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণা কৌশল ব্যবহার করা।
১.৩ গবেষণার বিষয়বস্তু:
প্রাত্যহিক খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ঝুঁকি ও রাজনীতি ।
১.৪ গবেষণার এলাকা
আমি আমার গবেষণার মাঠ হিসেবে ঢাকা জেলাকে বেছে নেই।  সমাজ বিজ্ঞানের অন্যান্য জ্ঞানকান্ডের (যেমনঃ অর্থনীতি, ভূগোল) একটি স্বতন্ত্রতার জায়গা হলো গবেষণার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পার্থক্য।  সমাজ বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা যেখানে দখরঃঃষব ধনড়ঁঃ ধ ষড়ঃদপদ্ধতি ব্যবহার করে সেখানে নৃবিজ্ঞান দখড়ঃ ধনড়ঁঃ ধ ষরঃঃষবদ পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে।  তাই আমিও আমার গবেষণার মাঠ হিসেবে ঢাকা জেলার সাভার থানার অন্তর্গত সাভার বাজারটিকে বেছে নিয়েছি।  গবেষণা কাজটিকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য আমি ধামরাই থানার অন্তর্গত দেপাসাই ও গোলাইল গ্রাম, ইসলামপুর আড়ত, বাইপাইল আড়ত এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের খাদ্য ও পুষ্টি ইনষ্টিটিউট এ  কাজ করি।
১.৫ গবেষণার যৌক্তিকতা
খাদ্য মানবজীবনের একটি অপরিহার্য বস্তু।  মানুষের সংস্কৃতিরও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  গরহুঃ (১৯৯৭) এর ভাষায় মানুষ যেভাবে তার সাংস্কৃতিক বস্তুসমূহের সাথে নিজেদের সংযুক্ত করে তেমনি আধুনিক সমাজে খাদ্যের পরিবর্তনশীল চরিত্র যাকে উৎপাদন ও ভোগ এবং ব্যবহার ও ফাংশন এর দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পাঠ করা যেতে পারে।   সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী উধারফ অৎহড়ষফ (১৯৯৯) খাদ্য নিয়ে চীনে দীর্ঘকাল কাজ করেছেন।  তিনি বলেন, ্তুঋড়ড়ফ রং ধহফ পড়হঃরহঁবং ঃড় নব ঢ়ড়বিৎ রহ ধ সড়ংঃ নধংরপ, ঃধহমরনষব ধহফ রহবংপধঢ়ধনষব ভড়ৎস্হ. আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যকে ঘিরে যে চক্র২সেদিকে তাকালে এই বক্তব্যকে অস্বীকার করা যায়না।  খাদ্য শুধুমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিষয় নয়।  এটি তার পরিবার, সমাজ, গোষ্ঠী পরিচিতি, সংস্কৃতি, ধর্ম এমনকি রাষ্ট্রীয় পরিসরের সাথে যুক্ত একটি বিষয়।  ‘পরিবারের সকলের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য কেনার সামর্থ্যের বিষয়টি যেমন জড়িত তেমনি রোজগার ও খাদ্য কেনার কাজটি কার হাতে কিভাবে রয়েছে এবং রন্ধন ও পরিবেশনের কাজটি কার হাতে রয়েছে এর ভেতর দিয়ে লিঙ্গীয় সম্পর্ককে অনুধাবন করা সম্ভব’৩(নৃবিজ্ঞান পত্রিকা ২০০৬পৃষ্ঠা ৩৯-৪০সংখ্যা ১১) ।  খাদ্যের সাথে বাজার অর্থনীতি জড়িত।  পুঁজিবাদী সমাজে খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে একচেটিয়া ভূমিকা রাখছে বাজার।  স্হানীয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার খাদ্যের নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ, মান, দাম প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ এবং একইসাথে সামর্থ্যকেও প্রভাবিত করছে।    

এখানে সরকারের বাজারব্যবস্হা নিয়ন্ত্রণও নজরদারির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।  খাদ্যের বাজারজাতকরণে সরকারি বিধি ও নিয়ন্ত্রণ এবং খাদ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রনে সরকার পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞান এবং ‘বেশী বেশী এসব খাবার গ্রহনের ফলে মানবদেহে কি কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে সম্পর্কিত গবেষকের ভাবনা তুলে ধরতে আমি আগ্রহী।  খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনও পর্যন্ত আমার জানামতে হয়নি।  বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রভাবে জনমনে যে উদ্বেগের চিত্র দেখা যাচ্ছে এই পরিস্হিতিতে এ বিষয়ে নৃবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে আমি যুক্তিযুক্ত মনে করছি। 

২চক্র- আমাদের খাদ্যগ্রহণ প্রণালী প্রতিদিন কয়েকটি বেলায় বিভক্ত।  যেমন: সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবার মূল কোর্স হিসেবে চক্রাকারে বছরজুড়ে চলতে থাকে শুধুমাত্র কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া।  যেমন: রোজা ও উপবাস।


0 comments:

Post a Comment