Sunday, April 28, 2013

প্রাত্যহিক খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ঝুঁকি ও রাজনীতি


১.১ ভূমিকা
সুন্দর ,স্বাসথ্যকর ও শান্তিময় জীবনযাপনে শরীর সুরক্ষার বিকল্প নেই।  নিয়মিত বিশুদ্ধ খাবার গ্রহন এবং অস্বাস্হ্যকর খাদ্য বর্জনই আমাদের সুস্হ জীবনযাপনের একমাত্র উপায়।  আমরা সবাই বাঁচতে ভালবাসি।  তাই বেঁচে থাকার জন্যই এত ঝক্কি ঝামেলা।  মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না বাঁচার জন্য খায় (দৈনিক আমার দেশ-৮ ফেব্রুয়ারি,২০১৩ )।  তা না হলে ডাক্তাররা রোগীদের যখন কিছু কিছু খাদ্য বস্তু সাময়িক খেতে বারণ করেন তখন রোগী ডাক্তারদের উপদেশ লঙঘন করত।  তাই স্বাস্হ্যের বিধিসম্মত সতর্কীকরণ, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করে জীবনকে সুস্হ, রোগমুক্ত করে রাখতে কে না চায়।  কিন্তু বর্তমান সময়ে খাবার নিয়ে মানুষের মনে নানা রকম প্রশ্নের উদয় হচ্ছে(যেমন- সে যে খাবারটা খাচ্ছে/কিনছে সেটা কি ভাল, তাতে কি কোন কেমিক্যাল আছে ইত্যাদি)।  আজকাল আমরা যেসব খাবার খাচ্ছি তার অধিকাংশই ভেজাল।  নিত্যদিনের চাল, ডাল, তেল, লবণসহ ঠান্ডা পানীয়দ্রব্য, ফলমূল এবং মিষ্টান্ন দ্রব্যে ভেজালের ছড়াছড়ি।  যেমন- কোকাকোলা, মিরান্ডা, পেপসি ইত্যাদিতে ক্ষতিকারক রঙ এবং রাসায়নিক তরল পদার্থ ব্যবহার করে বাজারজাত করা হচ্ছে।  মিষ্টান্নদ্রব্য যেমন- জিলাপি, বুন্দিয়া, রসগুল্লা প্রভৃতি বানানোর জন্য ময়দা,আটা,সুজি ইত্যাদি ভালভাবে মেখে দু-তিনদিন নিরাপদে পচানো হয় এবং তারপর নানা ধরনের পাউডার, রং মিশিয়ে হোটেল রেষ্টুরেন্টে সাজিয়ে রাখা হয়।  মরিচগুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো ঝকঝকে রঙিন করার জন্য ইটের গুঁড়োও মেশানো হয় বলে প্রায়ই শোনা যায়।  বিভিন্ন ধরনের ফলমূল যেমন- আম, কলা, পেঁপে, নাশপাতি এবং টমেটো, পটল, আলু ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদি তাজা রাখতেও কৃত্রিম উপায়ে পকাতে ইথোপেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইট নামক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে।  বিদেশ থেকে যেসব মাছ আমাদের দেশে আমদানি হচ্ছে সেগুলোতেও নাকি ফরমালডিহাইড নামক এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ ব্যবহার করা হচ্ছে।  খাবারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার শুরুর ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়।  এক যুগ আগেও খাবারে এত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হতো না যেমনটা বর্তমানে করা হয়। 

খাদ্যের উৎপাদন, বন্টন, ভোগ প্রভৃতি ব্যবস্হার সাথে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো জড়িত।  উৎপাদন, বন্টন ও ভোগকে ঘিরে যেমন সামাজিক সম্পর্ক ক্রিয়াশীল, তেমনি অর্থনৈতিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের শাসননীতি ও ক্রিয়াশীল।  গধৎী(১৯৭৬) সমাজ ব্যবস্হার ঐতিহাসিক বির্বতনকে
 দেখান যেখানে পরিবর্তিত সমাজব্যবস্হার সাথে উৎপাদন ব্যবস্হার পরিবর্তনকে দেখানো হয়েছে।  মার্ক্সের মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে বিদ্যমান অর্থনৈতিক শ্রেণীশোষনের মূলকে স্পষ্ট করার মধ্য দিয়ে শ্রেণীসংগ্রামের ঐতিহাসিকতাকে দেখানো এবং এর শেষ পরিণতি হিসেবে সমাজতন্ত্রকে উপস্থাপন করা।  তিনি আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে শুরু করে ধনতান্ত্রিক সমাজের প্রতিটি স্তরে শোষক এবং শোষিত শ্রেণীর সংগ্রামকে চিহ্নিত করেছেন।  উৎপাদন শক্তির বিকাশের মধ্যে দিয়ে এক সমাজ থেকে অন্য সমাজ ব্যবস্হায় রুপাান্তরের প্রক্রিয়ায় শ্রেণীশোষন কিভাবে বিদ্যামান থাকে তা তিনি দেখিয়েছেন।  বর্তমান সমাজ হলো পুঁজিবাদী সমাজ।  পুঁজিবাদী সমাজে উৎপাদনের একক হলো পণ্য।  পণ্য মানুষের শ্রমের ফসল যা বিনিময়ের জন্য তৈরি হয়।  পণ্যের বিনিময়মূল্য ও চাহিদা সৃষ্টির পরই আসে বাজারসর্ম্পক।  পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্হায় পন্য ভোগের জন্য মানুষ বাজারের ওপর নির্ভরশীল।  বাজারে পণ্যের যোগানের উপর ভোগের ধরন ও নির্ভরশীল।

খাবারে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের পেছনে নানান ধরনের রাজনীতি কাজ করে।  দেখা যায় যে, কৃষক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতেই খাবারে নানান ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।  কিছু মুষ্টিমেয় পণ্যব্যসায়ী সাধারণ ভোক্তার কথা চিন্তা না করে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থের কথা চিন্তা করে এ কাজ করছে।  এর ফলে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।  মানুষের স্বাস্হ্য ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।  খাবারের পুষ্টিগুন নষ্ঠ হচ্ছে।  এ নিয়ে গবেষকরা ও তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।  মিডিয়া এ বিষয়ে খুবই ভয়ংকর তথ্য দিচ্ছে।

আমার গবেষনার বিষয় হচ্ছে দৈনন্দিন খাবারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার।  খাদ্যকে ঘিরে মানুষের যে চিন্তা ধারণা ও বিশ্বাস রয়েছে সেটাকে দেখা।  একই সথে সমগ্র প্রক্রিয়াটির রাজনৈতিক অর্থনীতিকে বুঝতে চেষ্টা করা।  এক্ষেত্রে বর্তমানে বাজারে যেসব খাদ্যপন্য পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর গুণগত মান সম্পর্কে নানা রকম মতামত পাওয়া যায়।  ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারে এখন হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে।  বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেজাল খাদ্য বাজারজাত করা প্রতিরোধ করার চেষ্টা দেখা যায়।  এই প্রতিরোধের স্হায়িত্ব কতটুকু তা ভাবনার বিষয়। এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে খাবারে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার নিয়ে একটা নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রয়োজন তা আমি করার চেষ্টা করেছি।

0 comments:

Post a Comment